জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুকধারী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার মুখে পড়েছে। এই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়, যা পাকিস্তানের কড়া প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের পানিপ্রবাহে হস্তক্ষেপ ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র শামিল হবে এবং তার জবাব দেওয়া হবে সর্বশক্তি দিয়ে—যার মধ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিতও রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তিকে এতদিন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরল সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে দেখা হতো।
এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তান সিন্ধু নদব্যবস্থার পানি ব্যবহার করে, যা দেশটির কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রাণ।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিএস) পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলার জেরে চুক্তিটি ‘আপাতত স্থগিত’ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলা।
পাকিস্তান জানায়, কোনো পক্ষ একতরফাভাবে এই চুক্তি বাতিল বা স্থগিত করতে পারে না, কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্থায়ী চুক্তি।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পানির প্রবাহ বন্ধ বা সরিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে এবং তার জবাবে সম্পূর্ণ জাতীয় শক্তি ব্যবহার করা হবে।’
পরমাণু অস্ত্রের সম্ভাবনার কথা
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, ভারত যদি পাকিস্তানের পানি রোধে কোনও বাঁধ বা অবকাঠামো নির্মাণ করে, তাহলে পাকিস্তান সামরিকভাবে সেই স্থাপনা ধ্বংস করতে দ্বিধা করবে না। এক বিশ্লেষক বলেন, ‘জাতীয় শক্তির পূর্ণ ব্যবহার’ কথার অর্থ হলো, পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পথেও যেতে পারে।
সাবেক সিন্ধু পানি কমিশনার জামাত আলী শাহ মনে করেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত একটি রাজনৈতিক চাল।
তিনি বলেন, ‘চুক্তিটি একতরফাভাবে স্থগিত করা সম্ভব নয়। এর যে কোনো পরিবর্তনের জন্য দুই পক্ষের সম্মতি লাগবে।’ তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা ‘স্থগিত’ শব্দটি ব্যবহার করেছে ‘বাতিল’ নয়। তাদের বক্তব্য, পাকিস্তান যদি ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ মেটাতে পারে, তাহলে চুক্তি পুনরায় কার্যকর হতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে উদ্ভূত নতুন উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।
পানির মতো একটি মৌলিক উপাদান এখন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাব্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবউন